রুকইয়াহ করার ১১ টি উপায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য ও তাঁর ক্ষমা চাই। আমরা আমাদের নাফস ও আমাদের কর্মের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর…
১. দু হাতের তালু একত্রিত কোরে তাতে ফুঁক দেয়া এবং তিলাওয়াত করা:
আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন:
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا فَقَرَأَ فِيهِمَا قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ وَ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ
“প্রতি রাতে যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিছানায় (ঘুমাতে) যেতেন, তখন তাঁর দু’হাতের তালুকে তিনি একত্রিত করতেন, অতঃপর তাতে ফুঁক দিয়ে ক্বুল হু-ওয়াল্লাহু আহাদ, ক্বুল আ‘ঊযু বি-রব্বিল ফালাক্ব, ক্বুল আ‘ঊযু বি-রব্বিন নাস তিলাওয়াত করতেন অতঃপর পুরো শরীরে যতটুকু পারতেন তা দিয়ে তিনি মাসাহ করতেন। প্রথমে তাঁর মাথার উপরিভাগ, তাঁর মুখমন্ডল, এবং শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি শুরু করতেন। তিনি তিনবার এরূপ করতেন।’’[১] ফুঁক দেয়ার ক্ষেত্রে থুথু নিক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই, বরং (যদি তা করতেই হয়) তবে তা হতে হবে এতো সামান্য পরিমাণে যা ঠোঁট দিয়ে বাতাস বের করার মতই।
২. যেখানে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে সেখানে থুথু বা ফুঁক দেওয়া:
রুকইয়াহ
আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি তাদের শরীরে ফুঁক দিতেন এবং সূরাহ আল-ফালাক্ব ও সূরাহ আন-নাস পাঠ করতেন। “এবং যখন তিনি সেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন যে কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল, তখন আমি তাঁর উপর ফুঁক দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে তাঁর শরীর মাসাহ করে দিতাম কারণ আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে তাঁর হাত আমার হাতের চেয়ে অধিক বরকতময় ছিল।”[২] একটি বর্ণনায় এসেছে, “আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি সূরাহ আল-ফালাক্ব ও সূরাহ আন-নাস পাঠ করতেন ও তাঁর শরীরে ফুঁক দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে নিজেকে মাসাহ করতেন।” [৩]
রুকইয়াহ
কুরআনের যেকোনো সূরাহ থেকে তিলাওয়াত করার অনুমতি আছে কারণ পুরো কুরআনই হলো রুকইয়াহ যা শাইখ ইবনু বায (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন এবং এর পুরোটাই হলো শিফা। মহান আল্লাহ (তাবারাকা ওয়া তা’আলা) বলেন: “বলুন, ‘যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য, এটা হিদায়াত ও শিফা।’” (ফুসসিলাত: ৪৪) এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া-তা’আলা) বলেছেন: “আর আমি কুরআন থেকে তা নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত…” (আল-ইসরা: ৮২)
রুকইয়াহ করার ১১ টি উপায় জেনে নিন
৩. কিছু পানি নিন, তাতে কুরআন তিলাওয়াত করুন তারপর তাতে ফুঁক দিন, অতঃপর তা পান করুন এবং তা দিয়ে গোসল করুন:
রুকইয়াহ
কেউ চাইলে সামান্য পরিমাণ পানিতে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতে পারেন – তারপর অসুস্থ ব্যক্তি তা থেকে পান করতে পারেন অতঃপর গোসল করার সময় বাকিটুকু তিনি নিজের উপর ঢেলে দিতে পারেন, যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাবিত ইবনু ক্বাইস ইবনু শাম্মাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর ক্ষেত্রে করেছিলেন। [৪] কেউ যদি যমযমের পানিতে তিলাওয়াত করতে পারে তবে তা হবে উত্তম এবং তা নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই উক্তির কারণে, “নিশ্চয়ই এটি একটি বরকতময় পানি, যা খাদ্যযোগ্য ও রোগের নিরাময়।”[৫] তিনি (ﷺ) বলেছেন, “যমযমের পানিকে যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করা হবে সেটা তা পূরণ করবে।” [৬] এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “তুমি যদি তা পান করো, তবে এর দ্বারা তুমি আরোগ্য লাভ করবে, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন।”[৭] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে যে, “তিনি পানির পাত্রে যমযমের পানি রাখতেন এবং রোগাক্রান্তদের উপর তা ঢেলে দিতেন এবং তাদেরকে তা পান করতে দিতেন।”[৮] এবং তিনি বলেছেন: “পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ পানি হলো যমযম; এটা এক প্রকার খাদ্য এবং তা রোগ নিরাময়কারী।”[৯]
ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমি নিজে এবং অন্যান্যরা যমযমের পানি দিয়ে অদ্ভুত ও অচেনা রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করেছি — এবং এর মাধ্যমে আমি বহু রোগ নিরাময় করেছি, তাই আমি আল্লাহর অনুমতিতে তাদের স্বস্তি দিয়েছি।”[১০] আর এরপর প্রয়োজনে বাথরুমে প্রবেশ করাতে কোনো ক্ষতি নেই।[১১]
৪. যাইতূনের তেলে কুরআন তিলাওয়াত করুন ও তাতে হালকা ফুঁক দিন এবং তা দিয়ে মালিশ করুন:
রুকইয়াহ
যাইতূনের তেলে কুরআন তিলাওয়াত করুন এরপর তাতে ফুঁক দিন অতঃপর তা দিয়ে মালিশ করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা যাইতূন (জলপাই) খাও এবং এর তেল (মালিশ করার জন্য) ব্যবহার করো, কারণ এটা একটি বরকতময় গাছ।”[১২]
৫. ব্যথার স্থানে হাত রাখুন অতঃপর দুআ করুন:
রুকইয়াহ
উসমান ইবনু আবিল-আস আস-সাক্বাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অভিযোগ করলেন যে তিনি মুসলিম হওয়ার পর থেকে তাঁর শরীরে ব্যথা অনুভব করছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “শরীরের যে স্থানে তুমি ব্যথা অনুভব করছ সেখানে তোমার হাত রাখো এবং ৩ বার বলো:
بِاسْمِ اللَّهِ
বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে)। তারপর ৭ বার বলবে:
أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
‘আ‘ঊযু বিল্লাহি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাযিরু’।
{আমি আল্লাহ ও তাঁর কুদরতের (অসীলায় আল্লাহর কাছে) আশ্রয় চাচ্ছি ঐসমস্ত অনিষ্ট থেকে যা আমি অনুভব করি ও আশঙ্কা করি}।” [১৩] আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তুমি কোনো অসুস্থতায় ভুগবে, তখন তোমার হাত সেখানে রাখবে, তারপর বলবে:
بِسْمِ اللَّهِ أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ مِنْ وَجَعِي هَذَا
বিসমিল্লাহি, আ’ঊযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া ক্বুদরতিহি মিন শাররি মা আজিদু মিন ওয়াজা’ঈ হাযা।
{আল্লাহর নামে, আমি আমার এই ব্যথার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর ইজ্জত ও তাঁর ক্বুদরতের (মহিমা ও শক্তির অসীলায় আল্লাহর কাছে) আশ্রয় প্রার্থনা করছি}। অতঃপর তোমার হাত সেখান থেকে সরিয়ে নিবে এবং এটা বেজোড় সংখ্যক বার করবে।”[১৪]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, “যে স্থানে তুমি ব্যথা অনুভব করছ তার উপর তোমার ডান হাত রাখো এবং এই বোলে ৭ বার মাসাহ করো:
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ
আ’ঊযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু – প্রতিটি মাসাহর সাথে।[১৫]
{আমি যা অনুভব করছি তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর ইজ্জত ও ক্বুদরতের (মহিমা ও শক্তির অসীলায় আল্লাহর কাছে) আশ্রয় চাচ্ছি}।”
আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, “আমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডান হাত দিয়ে মাসাহ করতেন অতঃপর বলতেন:
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আযহিবিল বা’স, রব্বান-নাস, ওয়াশফি আন্তাশ-শাফী, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফাআন লা ইউগ্বদিরু সাক্বামা।
(কষ্ট দূর করুন, হে মানুষের রব! আরোগ্য দিন, কারণ আপনিই আরোগ্যদাতা। আপনার আরোগ্য ব্যতীত আর কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য যা রোগ-ব্যাধির কিছুই অবশিষ্ট রাখবে না)।”[১৬]
৬. নিজের উপর রুকইয়াহ করার সময় দুআ করা:
রুকইয়াহকেউ নিজের উপর রুকইয়াহ করার সময়ে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করবে:
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِي نَفْسِي مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيِنِي وَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِينِي
বিসমিল্লাহি আরক্বী নাফসী মিন কুল্লি শাই-ইন ইউ’যিনী ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হা-সিদিন আল্লাহু ইয়াশফিনী।
(আল্লাহর নামে, আমি নিজের উপর রুকইয়াহ করছি ঐসবের জন্য যা আমাকে ক্ষতি করে এবং প্রতিটি নাফসের অনিষ্ট থেকে অথবা প্রতিটি বদনজর থেকে, আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ করেন।) [১৭]
أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَنِي
আসআলুল্লাহাল ‘আযীম রব্বাল ‘আরশিল-‘আযীম আই-ইয়াশফিয়ানী।
(আমি মহান আল্লাহর নিকট, মহান আরশের প্রতিপালকের নিকট আমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি)।[১৮]
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاْسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লাহুম্মা রব্বান-নাস মুযহিবাল-বা’সি আশফি আন্তাশ-শাফী লা শাফিয়া ইল্লা আন্তা, শিফাআন লা ইউগ্বদিরু সাক্বামা।
{হে আল্লাহ! মানুষের রব, কষ্ট দূরকারী। (আমাকে) সুস্থতা দিন! কারণ আপনিই নিরাময়কারী। আপনি ছাড়া আর কোনও নিরাময়কারী নেই; এমন একটি নিরাময় যা কোনও রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখবে না}।[১৯]
৭. লালার সাথে কিছু মাটি মেশানো এবং সেটা দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মেখে দেয়া:
রুকইয়াহ
ব্যক্তি তার কিছু লালা তার আঙ্গুলে নিবে, তারপর তার আঙ্গুল মাটিতে (মাটি, বালি ইত্যাদি) রাখবে, তারপর রুকইয়াহ করার সময় অসুস্থ ব্যক্তিকে তা দিয়ে মেখে দিবে। আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ’আনহা) বলেন, “আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রুকইয়াতে পড়তেন:
بِاسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا، وَرِيقَةُ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا
“আল্লাহর নামে, আমাদের জমীনের মাটি, এবং আমাদের কারও কারও লালা, আমাদের রবের নির্দেশে আমাদের অসুস্থদের সুস্থ করে।”[২০]
তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরও বর্ণনা করেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তির অসুখ-বিসুখ হতো বা কোনো আঘাত পেতো, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর তর্জনী মাটিতে রাখতেন অতঃপর তা তুলে নিয়ে বলতেন:
بِاسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا، وَرِيقَةُ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا
“আল্লাহর নামে, আমাদের জমীনের মাটি, এবং আমাদের কারও কারও লালা, আমাদের রবের নির্দেশে আমাদের অসুস্থদের সুস্থ করে।” [২১]
আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “এই হাদীসের অর্থ হলো, তিনি তাঁর নিজের লালা ব্যবহার করতেন এবং তা নিজ আঙ্গুলের উপর রাখতেন, তারপর তাঁর আঙুল জমীনের মাটিতে রাখতেন এবং এর কিছু অংশ তাঁর আঙুলের সাথে লেগে যেত। অতঃপর তিনি ব্যথা বা আঘাতের স্থানে তা মেখে দিতেন এবং মাখার সময় হাদীছে বর্ণিত উক্ত শব্দগুলো উচ্চারণ করতেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।”[২২]
৮. রুকইয়াহ করার আগে, করার সময় বা তার পরে ফুঁক দেওয়া জায়েয:
১. পাঠ করার আগে ফুঁক দেওয়া (সামান্য লালা নিক্ষেপ করা):আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, “রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই প্রতি রাতে ঘুমাতে যেতেন, তখন তিনি তাঁর উভয় হাতের তালু একত্রিত করতেন, তারপর এতে ফুঁক দিতেন এবং এর মধ্যে পাঠ করতেন…”[২৩]
২. পাঠ করার সময় হালকা ফুঁক দেয়া:“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই প্রতি রাতে বিছানায় যেতেন, তখন তিনি তাঁর উভয় হাত (হাতের তালু) একত্রিত করতেন, তারপর আল-ইখলাছ, আল-ফালাক্ব এবং আন-নাস দিয়ে তাতে ফুঁক দিতেন…” [২৪] ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “অর্থাৎ তিনি এই আয়াতগুলো পাঠ করতেন এবং তিলাওয়াত করার সময় (তার হাতে) ফুঁক দিতেন।”[২৫]
৩. পাঠ করার পর ফুঁক নিক্ষেপ করা/ফুঁক দেওয়া: এর প্রমাণ হলো আলক্বামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সেই ঘটনা যখন তিনি এমন একটি লোকালয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যেখানে এক লোককে বেঁধে রাখা হয়েছিল কারণ সে পাগল হয়ে গিয়েছিল। লোকেরা আলক্বামাহকে বলল, “আপনার কাছে কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে আপনি তাকে আরোগ্য দিতে পারবেন?” অতঃপর তিনি সূরা আল-ফাতিহা তিলাওয়াত করলেন এবং সে (অসুস্থ ব্যক্তি) সুস্থ হয়ে গেলো। এক বর্ণনায় আছে, “তিনি তার উপর সকাল-সন্ধ্যা তিন দিন সূরা আল-ফাতিহা তিলাওয়াত করেছেন। যখনই তিনি তিলাওয়াত শেষ করতেন, তার কিছু লালা জমিয়ে তিনি নিক্ষেপ করতেন এবং তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে) মনে হচ্ছিল যেন সে একটি বন্ধন থেকে মুক্তি পাচ্ছিল। পারিশ্রমিক হিসেবে তারা তাঁকে একশত ভেড়া দিয়েছিল। [২৬]
৯. ফুঁক দেয়া বা লালা নিক্ষেপ করা ছাড়াই রুকইয়াহ করা যেতে পারে:
রুকইয়াহ
এটা প্রতিষ্ঠিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো ব্যক্তির নিকট যেতেন, তাদের জন্য দুআ করতেন কিন্তু তাদের গায়ে ফুঁক দিতেন না। আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “আমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করতেন:
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আযহিবিল-বা’স, রব্বান-নাস, ওয়াশফি আন্তাশ-শাফী, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফাআন লা ইউগ্বদিরু সাক্বামা।
{কষ্ট দূর করুন, হে মানুষের রব! এবং (আমাকে) আরোগ্য দিন! আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতীত কোনো আরোগ্য নেই; এমন আরোগ্য যা কোনো রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখবে না}।”[২৭]
এছাড়াও, আবূ সাঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেন যে, ফেরেশতা জিবরীল (‘আলাইহিস-সালাম) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, “মুহাম্মাদ, আপনি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?” নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হ্যাঁ।” অতঃপর জিবরীল (আলাইহিস-সালাম) বললেন:
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
“আল্লাহর নামে, আমি আপনার উপর রুকইয়াহ করছি ঐসব থেকে যা আপনার ক্ষতি করে, এবং সেই প্রতিটি নাফসের অনিষ্ট থেকে ও বদনজর থেকে। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করুন। আল্লাহর নামে, আমি আপনার উপর রুকইয়াহ করছি”[২৮]
সুতরাং এই উভয় হাদীছই প্রমাণ করে যে, রুকইয়াহ করার সময় থুথু বা ফুঁক দেওয়া জরুরী নয়।
১০. দান সাদাক্বাহ করা এবং অভাবী ও দরিদ্র মুসলিমদের সাহায্য করা:
রুকইয়াহ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “গোপনে সাদাক্বাহ করা রবের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়।”[২৯] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন: “মানুষের প্রতি কল্যাণ করা একটি মর্মান্তিক মৃত্যু, বালা-মুসিবত এবং ধ্বংস থেকে ব্যক্তিকে রক্ষা করে।”[৩০] এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদাক্বাহ করাকে এক প্রকার আরোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন: “সাদাক্বাহ করার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের অসুস্থদের চিকিৎসা করো।”[৩১]
১১. নববী পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিরাময়
১. মধু
আল্লাহ (তাবারাকা ওয়া তা ‘আলা) বলেছেন:
وَ اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ اَنِ اتَّخِذِیۡ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا وَّ مِنَ الشَّجَرِ وَ مِمَّا یَعۡرِشُوۡنَ ﴿ۙ۶۸﴾ ثُمَّ کُلِیۡ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ فَاسۡلُکِیۡ سُبُلَ رَبِّکِ ذُلُلًا ؕ یَخۡرُجُ مِنۡۢ بُطُوۡنِهَا شَرَابٌ مُّخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُهٗ فِیۡهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۶۹﴾
“তোমার রব মৌমাছিকে ইলহাম (অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ) দিয়েছেন: তুমি গৃহ নির্মাণ করো পাহাড়, বৃক্ষ এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর। এর পেট থেকে বের হয় বিভিন্ন রঙের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিষেধক। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” [সূরাহ আন-নাহাল, ১৬:৬৮-৬৯]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “তোমাদের চিকিৎসাগুলোর কোনো একটিতে যদি কল্যাণ থেকে থাকে, তবে তা আছে হিজামাকারীর হিজামায়, কিংবা মধু পানের মধ্যে, কিংবা আগুন দিয়ে ঝলসানোর মধ্যে (cauterization), যেই রোগের জন্য তা উপযোগী। কিন্তু আমি আগুন দিয়ে দাগ দেওয়াকে পছন্দ করি না।” আর রাসূল ঠান্ডা পানিতে মধু মিশিয়ে তা পান করাকে পছন্দ করতেন।[৩২]
২. কালোজিরা
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “কালোজিরা হলো মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের নিরাময়।”[৩৩]
এর বীজ বা তেল ব্যবহারযোগ্য, তাই তা খাওয়া বা ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. সকালে সাতটি কোরে মদীনার খেজুর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন বিষ বা যাদু দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।” [৩৪] ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) মনে করেন যে, এই বর্ণনাটি মদীনার সমস্ত খেজুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে এই দুই লাভা ভূমির মধ্যবর্তী সমতল এলাকার (মদীনা) সাতটি খেজুর খাবে, তবে সন্ধ্যা নাগাদ কোনো বিষ তার ক্ষতি করবে না।” [৩৫]
৪. হিজামাহ
রুকইয়াহ করার ১১ টি উপায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “তোমরা যেসব (চিকিৎসা) দ্বারা আরোগ্য লাভ করো তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো হিজামাহ।” [৩৬] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথার সামনের দিক ও কাঁধের মাঝখানে হিজামাহ করাতেন। [৩৭] এবং তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি (আরবি) মাসের ১৭, ১৯ এবং ২১ তারিখে নিজের উপর হিজামাহ করাবে, তবে এটি (তার জন্য) প্রতিটি রোগের প্রতিকার হবে।” [৩৮] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন: “হিজামাহ খালি পেটে করানো উত্তম, এবং এতে রয়েছে নিরাময় ও বারাকাহ, এবং তা ব্যক্তির বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই, আল্লাহর রহমত লাভের আশায় বৃহস্পতিবার নিজের উপর হিজামাহ করাও।” এবং বুধবার, শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার হিজামাহ করানো থেকে বিরত থাকুন। সোমবার এবং মঙ্গলবারে হিজামাহ করুন কেননা মঙ্গলবার হলো সেই দিন যেদিন আল্লাহ আইয়ূব (‘আলাইহিস সালাম)-কে তার সেই কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং বুধবারে একটি কঠিন মুসিবত দিয়ে তাকে পরীক্ষা করেছিলেন – এবং কুষ্ঠরোগ শুধুমাত্র বুধবার বা বুধবার দিবাগত রাতে দেখা যায়।” [৩৯]
পিজি হাসপাতাল অনলাইন টিকিট বুকিং দেওয়ার নিয়ম 2024
রুকইয়াহ
রুকইয়াহ করার ১১ টি উপায় আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করছি যেন তিনি আমাদের তাঁর ইবাদত করার ক্ষেত্রে সফলতা দান করেন, এবং তাঁর প্রাপ্য আনুগত্যটুকু করার তৌফীক দেন- আমরা তাঁর কাছে দুআ করছি যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদের উপর করুণা করেন এবং তিনি যেন আমাদের সুস্থ করেন কেননা তিনিই প্রকৃত নিরাময়কারী। এবং তিনি যেন আমাদের জান্নাতের চিরন্তন উদ্যানসমূহে প্রবেশ করান এবং তাঁর শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। আর সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলের উপর, তাঁর পরিবারবর্গ, তাঁর সাহাবা ও তাঁর অনুসারীদের উপর।