গর্ভাবস্থায় খাবার ৮ তালিকা ও কি কি ফল খাওয়া যাবে না গর্ভাবস্থার সময় মা ও শিশুর জন্য শারীরিক, মানসিক এবং পুষ্টিগত পরিবর্তন ঘটে, যা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থা সাধারণত ৩৯ থেকে ৪০ সপ্তাহ ধরে চলে এবং এটি তিনটি ত্রৈমাসিকে বিভক্ত: প্রথম ত্রৈমাসিকে হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য মর্নিং সিকনেস হতে পারে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মায়েরা সুস্থ অনুভব করেন, এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে শারীরিক অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থায় খাবার ৮ তালিকা ও কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় ফোলেট, আইরন, ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের মত পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। সুষম খাদ্য তালিকায় ফলমূল, সবজি, দুধজাত পণ্য, প্রোটিন, এবং দানা শস্য অন্তর্ভুক্ত।
শারীরিক পরিবর্তনের লক্ষণ গুলোতে বমি, ক্লান্তি এবং পেটের বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং যোগব্যায়াম করা জরুরি।
১. গর্ভাবস্থার সময়কাল
গর্ভাবস্থা সাধারণত ৩৯ থেকে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে, যা তিনটি ত্রৈমাসিকে ভাগ করা হয়:
- প্রথম ত্রৈমাসিক (১-১৩ সপ্তাহ): এই সময় শরীরের বেশ কিছু হরমোন পরিবর্তন হয়, যার ফলে মর্নিং সিকনেস বা বমি বমিভাব অনুভব হতে পারে।
- দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৪-২৬ সপ্তাহ): এই সময় অধিকাংশ মায়েরা নিজেদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বোধ করেন, এবং ভ্রূণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ): এই সময় মায়ের শরীরে শারীরিক অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়, এবং প্রসবের সময় নিকটবর্তী হয়।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়েদের জন্য সঠিক পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে মা এবং ভ্রূণের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া যায়। একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার তালিকা মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস প্রদান করে। নিচে কিছু খাদ্য পদের তালিকা দেওয়া হল যা গর্ভবতি মায়েরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
১. ফলমূল
- আপেল: ফাইবার এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
- কাঁঠাল: শর্করা এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
- কলা: পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ।
- ডুরান্টি (পেয়ারা): ভিটামিন C এবং ফাইবারের ভালো উৎস।
- বেরি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ।
২. সবজি
- ব্রোকোলি: ভিটামিন K, C এবং ফোলেট সমৃদ্ধ।
- ** স্পিনাচ**: আইরন, ফোলেট এবং ভিটামিন A এর ভালো উৎস।
- গাজর: বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন A সমৃদ্ধ।
- বাঁধাকপি: ফাইবার এবং ভিটামিন C সমৃদ্ধ।
- কাবিজ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের উৎস।
৩. দানাশস্য
- ওটস: ফাইবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ।
- কুইনোয়া: সম্পূর্ণ প্রোটিন এবং উপস্থিত মিনারেলস।
- চালের মধ্যে ব্রাউন রাইস: বেশি ফাইবার এবং ভিটামিন B এর উৎস।
- মটরশুঁটি: প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন B6 সমৃদ্ধ।
৪. প্রোটিন
- ডাল: উচ্চমানের প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস। যেমন মুসুর, তোড়, বা ছোলার ডাল।
- মাছ: সাল্মন, টিউনা, বা সারডাইন, যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত।
- চিকন/মুরগির মাংস: লো-ফ্যাট প্রোটিনের ভালো উৎস।
- ডিম: ভিটামিন D এবং কলিন সমৃদ্ধ।
- নাটস: আলমন্ড, আখরোট, যা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রотеিন সরবরাহ করে।
৫. দুগ্ধজাত খাদ্য
- দুধ: ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
- দই: প্রোবায়োটিক এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
- চিজ: ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের উৎস।
৬. স্বাস্থ্যকর চর্বি
- অ্যাভোকাডো: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন E সমৃদ্ধ।
- কোকোনাট অয়েল (নাড়ির তেল): মধুর এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি উৎস।
- লিন তেল: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস।
৭. পানীয়
- পানি: অপরিহার্য, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
- ফলমূলের রস: কম চিনি ও আঁশযুক্ত।
- গ্রীন টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস, তবে পরিমাণে সীমিত রাখুন।
৮. স্ন্যাকস ও অন্যান্য
- প্রাকৃতিক নাট ও শস্য: বাদাম ও শুকনো ফল।
- গ্রানোলা বার: যতটা সম্ভব চিনিহীন।
- স্মুদী: ফল ও দুধ/দই দিয়ে তৈরি।
খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ
- বিভিন্ন খাবার গ্রহণ করুন: প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া চেষ্টা করুন।
- সঠিক পরিমাণে খান: খিদে লাগলে খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে পরিহার করুন।
- আমিষ ও অনামিষ উভয় প্রকারের খাবার খান: যাতে সঠিক পুষ্টি পাওয়া যায়।
- ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন: খাদ্য তালিকা তৈরি করার আগে।
গর্ভাবস্থায় এড়াতে হবে এমন খাবার
- অ্যালকোহল
- কাঁচা বা অল্প সিদ্ধ মাছ
- কাঁচা পেঁপে ও অন্যান্য কাঁচা ফল
- সম্ভব হলে ক্যাফেইন এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, বিশেষ করে কিছু তরকারী বা সবজি। সাধারণভাবে, নিচে উল্লেখিত কিছু সবজি গর্ভাবস্থায় বেশি সতর্কতার সঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়:
- সরিষা পাতা: এই সবজিতে উচ্চ মাত্রায় অক্সালেট থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয়।
- করলা: করলা গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে বিরক্তিকর হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটাতে সক্ষম হতে পারে।
- কাঁচা পানির শাকসবজি: সবসময় নিশ্চিত করুন যে সবজি ভালভাবে ধোয়া হয়েছে, কাঁচা বা অপরিশোধিত শাকসবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কাঁচা মসলা বা স্যালাড: কাঁচা পেঁয়াজ, টমেটো, শসা ইত্যাদি খাওয়ার আগে সেগুলো ভালোভাবে ধোয়া উচিত।
- প্রিজারভেটিভ যুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার: এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
এই সবজি বা খাবারগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আগে, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল। গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই পুরোপুরি খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করতে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত।